Home সম্পাদকীয় আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে সিয়াম সাধনায় গভীর মনোনিবেশ করুন

আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে সিয়াম সাধনায় গভীর মনোনিবেশ করুন

মুনির আহমদ: আত্মসংযম আÍশুদ্ধি ও ত্যাগ তিতিক্ষার আহ্বান নিয়ে দীর্ঘ এক বছরের ব্যবধানে আবারও ফিরে এসেছে অপার রহমতের মাস রমযানুল মুবারক। মাহে রমযান আল্লাহ্ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হবার এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। রহমতের মাস, মাগফিরাতের মাস এবং দোযখ থেকে পরিত্রাণ লাভের মাস মাহে রমযানুল মুবারক আজ আমাদের মাঝে সমাগত। এ মাসের সাথে বছরের অন্য কোন মাসের তুলনা চলে না।

কারণ এ মাসেই নাযিল হয়েছে সর্বশেষ ও সর্বোৎকৃষ্ট খোদায়ী মহাগ্রন্থ কুরআনুল কারীম। এ মাসেই পাওয়া যায় এমন একটি রজনী, যার ইবাদত-বন্দেগী হাজার রাতের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম। যে রজনী প্রাপ্তির জন্য পূর্ববর্তী নবীগণ পর্যন্ত আকাংখা পোষণ করতেন। পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফের বর্ণনানুযায়ী এ মাসের একটি ফরয ইবাদত অন্য মাসের সত্তরটি ফরয ইবাদতের সমতুল্য। আর একটি নফল ইবাদত একটি ফরয ইবাদত বলে আল্লাহর দরবারে বিবেচিত হবে। এই পবিত্র মাসের প্রথমাংশে আল্লাহ্ তাআলা মু’মিন রোযাদারগণের উপর রহমত বর্ষণ, মধ্যমাংশে তাঁদের গুনাহ্ মাফ এবং শেষাংশে দোযখ থেকে মুক্তি দান করেন।

মানুষের জীবনের সার্বিক সফলতা ও বিভিন্ন মানবিক গুণাবলী বিকাশের জন্য সংযম ও আÍনিয়ন্ত্রণ একান্ত প্রয়োজন। ব্যক্তিত্ব গঠনেও সংযমের গুরুত্ব অপরিসীম। যে ব্যক্তি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, যার মধ্যে সংযম অবলম্বনের শক্তি নেই, তার মধ্যে কোন বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ববোধ সৃষ্টি হতে পারে না। ব্যক্তিত্বের যথার্থ বিকাশের জন্যে নিজের প্রবৃত্তি ও আবেগসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অর্জন করা অপরিহার্য। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে একজন মানুষের মধ্যে সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের গুণাবলী সৃষ্টি হয়। নিজের প্রবৃত্তির উপর বিবেক ও ইচ্ছাশক্তির প্রাধান্য স্থাপিত হয়।

মানুষের যে কয়টি মূল চাহিদা রয়েছে, তন্মধ্যে পানাহার ও যৌন চাহিদা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সিয়াম সাধনা এসব চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিক্ষা দেয়। একটানা ত্রিশ দিনের সিয়াম সাধনা মানুষের মধ্যে প্রবল ইচ্ছাশক্তির সঞ্চার করে। তাকে আত্মশক্তিতে বলীয়ান করে রোযার দিনে জৈবিক চাহিদা আর ইচ্ছাশক্তির লড়াইয়ের মাধ্যমে ব্যক্তি তার ইচ্ছাশক্তিকে শাণিত ও শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়। প্রবৃত্তির লাগামহীন প্রবণতা সংযত হয়ে বিবেক ও ইচ্ছাশক্তির হাতে আত্মসমর্পণ করে। ফলে এক সংযত ও সুনিয়ন্ত্রিত জীবন গঠনে সক্ষম হয় একজন মানুষ।

আরও পড়তে পারেন-

বস্তুতঃ সিয়াম সাধনা সংযত ও নিয়ন্ত্রিত জীবন গঠনের এক বলিষ্ঠ কর্মসূচী। এর যথার্থ অনুশীলন আমাদের জীবনে বয়ে আনে প্রভূত কল্যাণ, সৃষ্টি করে সংযম, আত্মশক্তি ও ইচ্ছাশক্তির বলিষ্ঠতা এবং বিবেকের প্রাধান্যতা আর শাণিত ব্যক্তিত্ব।

সিয়াম সাধনার মর্যাদা ও বিশেষত্বের পেছনে প্রচ্ছন্ন কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমতঃ রোযা আসলে একটি অদৃশ্য ও গোপন ইবাদত। তাই এই ইবাদতটি গোপনভাবে কেবলমাত্র আল্লাহ্ তাআলার জন্যই নিবেদিত হয়ে থাকে। রোযার কোন দৃশ্যমান অবয়ব ও অস্তিত্ব নেই, যেমন- অন্যান্য ইবাদত নামায, যাকাত, হজ্ব ইত্যাদির বাহ্যিক ও দৃশ্যমান অবয়ব রয়েছে। তাছাড়া রোযা নিয়্যাতের সাথে সম্পৃক্ত।

রোযাদার আল্লাহর রেযামন্দী ও খুশনুদী অর্জনের লক্ষ্যে রোযায় নিয়্যাত করে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড হতে বিরত থাকে। রোযাদারের এই মানসিক দৃঢ় চিত্ততা কেউ বাইরে থেকে দেখতে পায় না, অবলোকন করতে পারে না। কেউ যদি প্রকৃত পক্ষে রোযাদার না হয়েও বলে বসে যে, আমি রোযাদার, তা বাইরে থেকে কেউ সঠিক ও বেঠিক বলে মন্তব্য করতে পারে না বা তাকে মিথ্যাবাদী বলে সাব্যস্ত করতে পারে না।

মানসিক এই নিয়্যাত ও উদ্দেশ্যকে একমাত্র আল্লাহ্ তাআলাই জানেন, বুঝেন ও উপলব্ধি করতে পারেন। তাই তিনি রোযাকে একান্তভাবে নিজের বলে ঘোষণা করেছেন এবং এর প্রতিফল কত বড় হবে, তা নির্ধারণের বিষয়টি নিজের কাছে গোপন রেখেছেন। সিয়াম সাধনার প্রকৃত অবস্থা ও পরিমণ্ডল অনুসারে আল্লাহ্ তাআলা এর বিনিময় প্রদান করবেন।

সারকথা, ইবাদতের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও নৈকট্য লাভ। এ কারণে একজন প্রকৃত রোযাদার প্রচণ্ড তৃষ্ণা সত্ত্বেও গোপনে পানি পান করে না। অন্তরে আল্লাহর ভয় না থাকলে এটি কখনো সম্ভব হতো না। রোযা রাখার মাধ্যমে মানুষের মনে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয়, তাঁর সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের অনুভূতি তীব্র হয়। এভাবেই অর্জিত হয় তাক্বওয়া, যা মু’মিনের মহামূল্যবান গুণ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।